Factory Compliance Score বাড়ানোর ১০টি বাস্তব উপায়
ভূমিকা
আজকের দিনে গার্মেন্টস বা ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরির জন্য Compliance Score কেবলমাত্র একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি ক্রেতার আস্থা, ব্যবসার টিকে থাকা এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও বায়াররা সবসময় ফ্যাক্টরির social compliance, safety, environmental standard, এবং শ্রম আইন মেনে চলা নিয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। তাই যে কোনো ফ্যাক্টরির জন্য কমপ্লায়েন্স স্কোর বাড়ানো একটি অপরিহার্য বিষয়।
এখন প্রশ্ন হলো—কীভাবে এই স্কোর বাস্তবভাবে বাড়ানো যায়? শুধু নীতি লিখে রাখলেই হবে না, দরকার কার্যকর উদ্যোগ, নিয়মিত মনিটরিং এবং কর্মীদের অংশগ্রহণ।
চলুন দেখে নেই Factory Compliance Score বাড়ানোর ১০টি বাস্তব উপায়।
১. ডকুমেন্টেশন সঠিক রাখা
প্রতিটি কমপ্লায়েন্স অডিটের প্রথম ধাপই হলো ডকুমেন্ট চেক করা। শ্রমিকদের উপস্থিতি রেজিস্টার, বেতন স্লিপ, ছুটির রেকর্ড, সেফটি ট্রেনিং ডকুমেন্ট—সবকিছু আপডেট ও নির্ভুল রাখতে হবে।
কৌশল:
- নিয়মিত ডকুমেন্ট আপডেট করুন।
- ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করুন।
- ডকুমেন্ট চেকলিস্ট তৈরি করে মাসিক অডিট করুন।
২. শ্রম আইন মেনে চলা
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০২৫) অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কাজের সময়, ছুটি, ন্যূনতম মজুরি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা—সব বিষয় সঠিকভাবে পালন না করলে স্কোর নেমে যাবে।
কৌশল:
- HR টিমকে নিয়মিত লেবার ল’ ট্রেনিং দিন।
- শ্রমিকদের অভিযোগ শোনার জন্য গ্রিভেন্স মেকানিজম চালু করুন।
৩. নিরাপত্তা মান বজায় রাখা
অগ্নি নিরাপত্তা, বিল্ডিং সেফটি ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফ্যাক্টরির কমপ্লায়েন্সের বড় অংশ।
কৌশল:
- নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করুন।
- ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম পরীক্ষা করুন।
- জরুরি বহির্গমন পথ সবসময় খোলা রাখুন।
৪. কর্মীদের প্রশিক্ষণ
শ্রমিকদের সচেতনতা ছাড়া কোনো নীতি কার্যকর হয় না। সেফটি, শ্রম আইন, কোড অব কন্ডাক্ট—সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
কৌশল:
- মাসিক ট্রেনিং ক্যালেন্ডার তৈরি করুন।
- সহজ ভাষায় ও ভিজ্যুয়াল এইড দিয়ে প্রশিক্ষণ দিন।
৫. বেতন ও সুবিধার স্বচ্ছতা
সময়ে বেতন প্রদান, ওভারটাইমের সঠিক হিসাব, বোনাস ও ছুটির সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো অডিটে বিশেষভাবে চেক করা হয়।
কৌশল:
- ডিজিটাল পেরোল সিস্টেম ব্যবহার করুন।
- বেতন স্লিপ শ্রমিকদের হাতে দিন।
৬. পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম
গ্রিন কমপ্লায়েন্স এখনকার অন্যতম শর্ত। পানি ব্যবহার কমানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শক্তি সাশ্রয়ী উদ্যোগ স্কোর বাড়ায়।
কৌশল:
- বর্জ্য সঠিকভাবে ডিসপোজ করুন।
- এনার্জি সেভিং লাইট ও মেশিন ব্যবহার করুন।
৭. নিয়মিত ইন্টারনাল অডিট
বায়ার অডিটের জন্য অপেক্ষা না করে নিজস্বভাবে ইন্টারনাল অডিট করতে হবে।
কৌশল:
- মাসিক ইন্টারনাল অডিট টিম গঠন করুন।
- প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে চেকলিস্ট ব্যবহার করুন।
৮. অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা (Grievance Mechanism)
শ্রমিকদের অভিযোগ শুনে দ্রুত সমাধান করা হলে কর্মপরিবেশ উন্নত হয় এবং অডিট স্কোর বাড়ে।
কৌশল:
- অভিযোগ বাক্স বা হেল্পলাইন চালু করুন।
- অভিযোগকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করুন।
৯. ক্রমাগত উন্নয়ন পরিকল্পনা (CAP & CAR)
অডিটে ফাইন্ডিংস আসলে Corrective Action Plan (CAP) ও Corrective Action Report (CAR) তৈরি করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৌশল:
- CAP বাস্তবায়নের টাইমলাইন তৈরি করুন।
- নিয়মিত ফলোআপ মিটিং করুন।
১০. ম্যানেজমেন্ট কমিটমেন্ট
ফ্যাক্টরির মালিক ও টপ ম্যানেজমেন্ট যদি গুরুত্ব না দেন, তবে স্কোর বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই লিডারশিপের দায়িত্ব হলো নিয়মিত মনিটরিং ও ইনভেস্টমেন্ট।
উপসংহার
Factory Compliance Score বাড়ানো একদিনে সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার ধারাবাহিক পরিকল্পনা, কর্মীদের অংশগ্রহণ, সঠিক ডকুমেন্টেশন ও ম্যানেজমেন্টের অঙ্গীকার। মনে রাখবেন, ভালো স্কোর মানে শুধু অডিট পাশ নয়, বরং কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও টেকসই পরিবেশ তৈরি করা।
FAQ
প্রশ্ন ১: Compliance Score কীভাবে মাপা হয়?
উত্তর: এটি সাধারণত বায়ার বা সার্টিফাইড অডিট টিম ডকুমেন্ট, শ্রম আইন পালন, নিরাপত্তা মান এবং কর্মীদের কল্যাণ দেখে নির্ধারণ করে।
প্রশ্ন ২: কমপ্লায়েন্স স্কোর কম হলে কী হয়?
উত্তর: স্কোর কম হলে বায়ার অর্ডার বাতিল করতে পারে বা শর্তসাপেক্ষে Corrective Action Plan দিতে পারে।
প্রশ্ন ৩: ফ্যাক্টরি কি বছরে একবারই অডিটের মুখোমুখি হয়?
উত্তর: না। অনেক ক্ষেত্রে বছরে একাধিকবার অডিট হতে পারে, বিশেষ করে বড় ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন ৪: সবচেয়ে বেশি কোন বিষয়গুলোতে অডিটররা গুরুত্ব দেন?
উত্তর: শ্রম আইন মেনে চলা, কর্মীদের সেফটি, বেতন প্রদানের স্বচ্ছতা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ।