বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি । Sexual Harassment in the Workplace of Bangladesh

 

যৌন-হয়রানি । Sexual-Harassment

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি।

Sexual Harassment in the Workplace of Bangladesh.

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি কি?

যৌন হয়রানি হচ্ছে অবৈধ, অযাচিত, অপ্রত্যাশিত যৌন আচরণ যা অন্যের অন্য অপনানজনক, হয়রানিমূলক ও অমানবিক এবং যা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনকে চরম প্রতিকুলতার মধ্যে ঠেলে দেয়।

সহজভাবে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি এর সংজ্ঞাঃ

যৌন হয়রানি হল অনাকাঙ্খিত যৌন অগ্রগতি, যৌন সুবিধার জন্য অনুরোধ, এবং অন্যান্য মৌখিক বা শারীরিক আচরণ যা আপত্তিকর এবং একজন কর্মচারীর কাজের পারফরম্যান্সে হস্তক্ষেপ করে বা একটি ভীতিজনক কাজের পরিবেশ তৈরি করে।

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানির অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি ও আচরণঃ

  • স্পর্শ করা, ধরা, অনুমতি ব্যতিরেকে শারীরিক সংস্পর্শ তৈরি করা বা তৈরির চেষ্টা করা।
  • যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য ছুড়ে দেয়া।
  • আড়চোখে দেখা, বচন কটাক্ষ করা।
  • যৌন অনুগ্রহের অনুরোধ করা।
  • ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেকোনভাবেই কোন নগ্ন, অশালীন, ছবি প্রদর্শন।
  • কারো প্রতি যৌন অঙ্গভঙ্গি বা প্রস্তাবমূলক শারীরিক আবেদন প্রদর্শন।
  • কাউকে ব্যক্তিগত যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা।
  • নির্দিষ্ট কারো প্রতি বা কারো আশেপাশে যৌন কৌতুক বা যৌনতা মিশ্রিত মন্তব্য করা।
  • কাউকে যৌনতা মিশ্রিত শব্দ / বাক্য দিয়ে গালিগালাজ করা।
  • কারো প্রতি সরাসরি যৌন নিপীরণ করা বা চেষ্টা করা বা নিপীরণের উদ্দেশ্যে হামলা করা।
Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি


Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি কিভাবে হয়ঃ

  • যৌন ইঙ্গিতবাহী মৌখিক, লিখিত, শারীরিক বা প্রদর্শনজনিত আচরণ।
  • যৌন অনুগ্রহের অনুরোধ
  • অনাকাংখিত বা অপ্রত্যাশিত আচরণ নিয়ে কারো প্রতি অগ্রসর হওয়া।
Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি


Sexual Harassment বা যৌন হয়রানির প্রকারভেদঃ

  • মৌখিক যৌন হয়রানি
  • শারীরিক যৌন হয়রানি
  • প্রদশর্নন জনিত যৌন হয়রানি


মৌখিক যৌন হয়রানিঃ

  • যৌন ইঙ্গিতবাহী গুজব
  • যৌন উপাদান সম্বলিত গল্প
  • অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ কৌতুক
  • ভিত্তিহীন উদ্দ্যে্শ্য
  • শিস বাজানো।
  • কারো বাহ্যিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করা।

শারীরিক যৌন হয়রানিঃ

  • ছোঁয়া
  • ঘর্ষণ
  • যৌন হালমা
  • অকস্মাৎ ধরা
  • চিমটি কাটা
  • পথ আগলে দাড়ানো
  • জড়িয়ে ধরা।

প্রদশর্নন জনিত যৌন হয়রানিঃ

  • অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি
  • নগ্ন ছবি দেখানো
  • যৌন সম্পর্কিত বস্তুর প্রদর্শন

যৌন হয়রানির শিকার কারা?

যেকেউ যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে।

বিভিন্ন প্রকার Sexual Harassment বা যৌন হয়রানিঃ

ধরন অনুযায়ী যৌন হয়রানিকে দুইবাবে ভাগ করা যায়ঃ

  • Quid Pro Quo/ক্ষতিপূর্ণ/এটা করলে ওটা পাবে নচেৎ নয়ঃ

কোন প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ, চাকুরী, দায়িত্ব, প্রশিক্ষণ, পদোন্নাতি, পদাবনতি, সুযোগ/সুবিধা প্রদান বা বাতিল করা, বদলি ইত্যাদি সিদ্ধান্ত যদি কোন ব্যক্তির অবৈধ, অযাচিত অনভিপ্রেত যৌন অনুগ্রহের প্রস্তাব গ্রহণ বা বাতিল  করার উপর নির্ভর করে তবে তাকে বলা হয় Quid Pro Quo/ক্ষতিপূর্ণ/এটা করলে ওটা পাবে নচেৎ নয়।

  • Hostile Working Environment/প্রতিকুল কর্মপরিবেশঃ

যৌন আচরণ বা অনুগ্রহের প্রস্তাবে সারা না দেয়ায় হুমকি, অপমানজনক মন্তব্য, অপদস্থ করা, ব্যক্তিগত যৌন জীবন নিয়ে অসত্য গুজব ছড়ানো, যৌন সম্পৃক্ত কৌতুক ইত্যাদির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির কাজের পরিবেশকে এমনভাবে বিষিয়ে তোলাকে প্রতিকুল কর্মপরিবেশ বা Hostile Working Environment বলা হয়। এটা আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং সামাজিকভাবে হেয় ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ করে তোলে।

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানির প্রভাবঃ

মিডিয়াতে যৌন হয়রানিঃ

  • তৈরি পোষাক শিল্পের যৌন হয়রানির মামলা বা ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে।
  • যৌন হয়রানির গুজব আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সচেতন ক্রেতাদের সাথে সম্পর্কে গুরতর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • এটি কারখানার অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার উপর প্রতিকুল প্রভাব ফেলতে পারে।

উৎপাদনশীলতার ক্ষতিঃ

  • যৌন নিপীরণ ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠান উভয় স্থরেই শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও মনকে প্রভাবিত করে।
  • কর্মীর মধ্যে বিষন্যতা দেখা দেয়।
  • কাজের প্রেরণা বা উৎসাহে ঘাটতি।
  • পন্যের গুনগতমান নিম্নমূখী হয়।
  • অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়।
  • উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

প্রতিষ্ঠান বা কারখানার উপর প্রভাবঃ

  • উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া।
  • তদন্ত ও মামলার জন্য ব্যয় বেড়ে যাওয়া।
  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খারাপ ধারণা প্রকাশ ও প্রচার।
  • কর্মীদের বিপর্জয়।
  • প্রতিষ্ঠানের নাম ও সুনাম নষ্ট হওয়া।

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানির শিকার হলেঃ

হয়রানিমূলক আচরণ চিহ্নিত করুনঃ আপনার প্রতি সংঘটিত আচরণ কোন ধরণের যৌন ইঙ্গিতবাহী কিনা বা আপনার উপর দেয়া চাপ, শাস্তি, পদোন্নতি, পদাবনতি ইত্যাদি করো যৌন অনুগ্রহের আবেদন গ্রহণে বাধ্যকরার উদ্দেশ্যে কিনা তা চিহ্নিত করুন।

সংঘটিত ঘটনার রেকর্ড রাখুনঃ কবে, কখন, কোথায়, কি ঘটনা ঘটিয়েছিল, কে ঘটিয়েছিল ইত্যাদি যেকোন উপায়ে একটা নোট রাখুন এবং এর সাথে ঘটনার প্রমাণ (সম্ভব হলে) সংরক্ষণ করুন।

অভিযুক্তের মুখোমুখি হওয়াঃ যদি আপনি নিরাপদ বোধ করেন তবে সরাসরি অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন যে তার আচরণ আপনার জন্য পীড়াদায়ক। তাকে এধরণের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বলুন।

সুপারভাইজার বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুনঃ হয়রানি অব্যাহত থাকলে আপনি আপনার সুপারভাইজার বা অভিযুক্তের সুপারভাইজার বা মানব সম্পদ বিভাগকে অবহিত করুন।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিতে(Sexual Harassment Prevention Committee) অভিযোগ উত্থাপনঃ আপনি ইচ্ছা করলে সুনির্দিষ্ট তথ্যাদির ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তথ্য প্রমান সহ (যদি থাকে) অত্র কমিটিতে উপস্থাপন করতে পারবেন।

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি রোধে করনীয়ঃ

সাম্প্রতিক সময়ে (2009) মহামান্য উচ্চ আদালত যুগান্তকারী এক রায়ের মাধ্যমে যৌন হয়রানি ও ভেদাভেদমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপর ন্যাস্ত করেছেন। আইনের এই নির্দেশনা পালন ও শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অত্র প্রতিষ্ঠান নিম্নলিখিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছেনঃ

  • কার্যকর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন
  • যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন
  • কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান
  • যৌন হয়রানি সম্পর্কে উৎপাদন পরিচালক/ব্যবস্থাপক/সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ প্রদান সকল কর্মীর জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ

Sexual Harassment বা যৌন হয়রানি রোধকল্পেঃ

Sexual Harassment Training

প্রশিক্ষণঃ

মধ্যম ব্যবস্থাপনাকারীদের প্রশিক্ষণঃ যৌন নিপীরন মোকাবেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য এই প্রশিক্ষণ। যৌন নিপীরণের তথ্য আদান, নিরপেক্ষ তদন্ত, সাক্ষাৎকার, গোপনীয়তা ইত্যাদি এই প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্ত।

সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণঃ যারা তৃণমূলে কর্মী ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা ও এতে বর্ণীত কর্মীর অধিকার, যৌন হয়রানিমূলক কর্মকান্ড, এর প্রতিকার ও শাস্তি সম্পর্কে অবগত করতে হবে যাতে তারা নিজেদেরকে অনৈতিক/অশালীন কর্মকান্ড থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে।

সাধারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণঃ এই প্রশিক্ষণ কর্মীদের যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অধিকার এবং দায়িত্বের উপর আলোকপাত করা হবে। কর্মী হিসেবে তার অধিকার, যৌন নিপীরন চিহ্নিত করা, প্রতিবাদ/প্রতিরোধ করা, অভিযোগ দাখিল ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে করনীয় সম্পর্কে সকল কর্মীদের সচেতন করতে হবে।



সকলের অঙ্গীকার হওয়া উচিতঃ

আমরা কোন কর্মী বা অধনস্থদের সাথে এমন কোন আচরণ বা ব্যবহার করবো না যাকে অবৈধ বা যৌন হয়রানি বলে সংঙ্গায়িত করা যায়।
এবং
যৌন হয়রানি ও ভেদাভেদবীহিন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবো।

নবীনতর পূর্বতন