HR সেকশনে দ্বৈত রিপোর্টিংয়ের সমস্যা: গার্মেন্টস শিল্পের বাস্তব চিত্র ও সমাধান
গার্মেন্টস শিল্পে মানবসম্পদ (HR) বিভাগকে বলা হয় “মানুষ ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু”। কিন্তু বাস্তবে HR কর্মকর্তাদের অনেক সময় জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো দ্বৈত রিপোর্টিং (Double Reporting)। অর্থাৎ একজন HR কর্মীকে একসাথে দুইজন বসের কাছে রিপোর্ট করতে হয়— যেমন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার এবং হেড অব HR।
এই দ্বৈত রিপোর্টিং শুধু বিভ্রান্তিই তৈরি করে না, বরং HR কর্মীদের কার্যকারিতা, মানসিক চাপ এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
চলুন বিস্তারিত আলোচনা করি—
🔹 দ্বৈত রিপোর্টিং বলতে কী বোঝায়?
দ্বৈত রিপোর্টিং হলো এমন অবস্থা যেখানে একজন HR কর্মীকে একসাথে দুইজন সুপিরিয়রকে সন্তুষ্ট করতে হয়। একজন হয়তো প্রোডাকশনের কাজের তাগিদ দিচ্ছেন, আরেকজন কোম্পানির HR পলিসি ও কমপ্লায়েন্স বজায় রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন।
ফলে HR কর্মীরা দ্বিধায় পড়ে যান— কাকে অগ্রাধিকার দেবেন? কার নির্দেশনা আগে মানবেন?
🔹 বাস্তব উদাহরণ: কোথায় কোথায় সমস্যা হয়?
১. রিক্রুটমেন্ট কনফ্লিক্ট
- ফ্যাক্টরি ম্যানেজার চান দ্রুত শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হোক, যাতে প্রোডাকশন বন্ধ না হয়।
- হেড অব HR চান ডকুমেন্ট যাচাই ও নিয়ম মেনে নিয়োগ দিতে।
২. পে-রোল ও ওভারটাইম কনফ্লিক্ট
- প্রোডাকশন বস চান শ্রমিকদের ওভারটাইম টাকা দ্রুত ছাড়তে।
- HR বস চান সব ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পর টাকা রিলিজ করতে।
৩. কমপ্লায়েন্স বনাম প্রোডাকশন প্রেশার
- কমপ্লায়েন্স টিম চায় শ্রমিকদের ছুটি, নিরাপত্তা ও বেনিফিট ঠিকভাবে নিশ্চিত হোক।
- প্রোডাকশন ম্যানেজার চান ডেলিভারি সময়মতো শেষ করতে, তাই ছুটি কম দিতে চাপ দেন।
৪. পারফরম্যান্স এপ্রেইজাল কনফ্লিক্ট
- একজন বস চান রিপোর্ট শুধু উপস্থিতি ও শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে হোক।
- অন্যজন চান শ্রমিকদের প্রোডাকশন টার্গেট অনুযায়ী পারফরম্যান্স রিপোর্ট হোক।
🔹 HR কর্মকর্তাদের জন্য বাস্তব দোটানা
- দুই বস ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা দিলে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করা কঠিন হয়ে যায়।
- কোন ডকুমেন্ট আগে তৈরি করবেন— কমপ্লায়েন্স নাকি প্রোডাকশনের জন্য— তা পরিষ্কার থাকে না।
- অনেক সময় HR অফিসারকে “বাই ফোর্স কম্প্রোমাইজ” করতে হয়, যাতে দুজনকেই খুশি রাখা যায়। কিন্তু এতে কাজের মান নষ্ট হয়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ কর্মক্ষেত্রে অসন্তোষ ও স্ট্রেস তৈরি করে।
🔹 এর প্রভাব কী হতে পারে?
- HR কর্মীদের মনোবল কমে যায়
- কাজের মান নষ্ট হয়
- কমপ্লায়েন্স ঝুঁকির মুখে পড়ে
- শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ে
- ম্যানেজমেন্টের ভেতরে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়
🔹 সমাধান: কীভাবে দ্বৈত রিপোর্টিং সমস্যা কমানো যায়?
১. স্পষ্ট রিপোর্টিং লাইন নির্ধারণ
HR কর্মকর্তাদের মূলত HR হেড-এর অধীনে রাখা উচিত। প্রোডাকশনের সাথে কাজ সমন্বয় করবে, কিন্তু ফাইনাল রিপোর্টিং লাইন এক হওয়া জরুরি।
২. কমিউনিকেশন প্রোটোকল
একজন বসকে প্রাইমারি রিপোর্ট দেওয়া হবে। অন্যজনকে কপি (CC) পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু দ্বৈত বস সরাসরি নির্দেশনা দেবেন না।
৩. পলিসি-বেইজড কাজ
HR কর্মকর্তাদের সবসময় কোম্পানির HR পলিসি ও শ্রম আইনকে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা আসবে।
৪. ম্যানেজমেন্ট লেভেল বোঝাপড়া
উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্টকে বোঝাতে হবে যে HR হলো “নিরপেক্ষ” সেকশন। তাদের ওপর অতিরিক্ত প্রোডাকশন চাপ দিলে পুরো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫. ট্রেনিং ও সচেতনতা
ম্যানেজারদের নিয়মিত ট্রেনিং করাতে হবে যেন তারা HR-এর ভূমিকা বুঝতে পারেন এবং দ্বৈত নির্দেশনা না দেন।
✅ সংক্ষেপে
গার্মেন্টস শিল্পে HR সেকশনে দ্বৈত রিপোর্টিং হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এতে HR কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, কাজের মান নষ্ট হয় এবং কর্মপরিবেশ খারাপ হয়।
সমাধান হলো— স্পষ্ট রিপোর্টিং লাইন, কার্যকর যোগাযোগ, পলিসি অনুসরণ, এবং ম্যানেজমেন্ট বোঝাপড়া। HR যদি নিরপেক্ষ থেকে নিয়মমাফিক কাজ করতে পারে, তাহলে এই দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে যাবে।
❓ FAQs
প্রশ্ন ১: দ্বৈত রিপোর্টিং সবচেয়ে বেশি কোন সেকশনে হয়?
উত্তর: সাধারণত রিক্রুটমেন্ট, পে-রোল, কমপ্লায়েন্স ও পারফরম্যান্স এপ্রেইজাল সেকশনে।
প্রশ্ন ২: HR কর্মকর্তা কাকে অগ্রাধিকার দেবেন?
উত্তর: সর্বপ্রথম কোম্পানির HR পলিসি ও শ্রম আইনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রশ্ন ৩: দ্বৈত রিপোর্টিং কমাতে কোম্পানির কী ভূমিকা থাকা উচিত?
উত্তর: স্পষ্ট রিপোর্টিং স্ট্রাকচার তৈরি, দায়িত্ব বণ্টন, এবং উভয় বসকে সচেতন করা।
প্রশ্ন ৪: এই সমস্যা সমাধান না করলে কী হতে পারে?
উত্তর: HR কর্মীদের হতাশা, কর্মী টার্নওভার বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি, এবং বায়ারদের কাছে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষতি।