Income Tax Ordinance: বেতন থেকে আয়কর কর্তন ও রিপোর্টিং গাইড

Income Tax Ordinance: কর্মীদের বেতন থেকে আয়কর কর্তন ও রিপোর্টিং প্রক্রিয়া

ভূমিকা

বাংলাদেশে প্রতিটি চাকরিজীবীর জন্য আয়কর একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। একজন কর্মী যখন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তখন তাঁর বেতন থেকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর কেটে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটি শুধু কর্মীর নয়, প্রতিষ্ঠানের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুলভাবে আয়কর কর্তন করা হলে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, অতিরিক্ত ট্যাক্স বা এমনকি আইনি জটিলতার মুখোমুখি হতে হতে পারে।

Income Tax Ordinance, 1984 অনুযায়ী নিয়োগকর্তাদের একটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব আছে। তারা কর্মীদের বাৎসরিক বেতনভিত্তিক আয়কর সঠিকভাবে হিসাব করবে, প্রযোজ্য কর কেটে নিয়ে সরকারে জমা দেবে এবং প্রয়োজনীয় রিপোর্ট সাবমিট করবে।

Income Tax Ordinance: বেতন থেকে আয়কর কর্তন ও রিপোর্টিং গাইড 

এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব:

  • বেতন থেকে আয়কর কর্তনের নিয়ম
  • করযোগ্য আয়ের কাঠামো
  • নিয়োগকর্তার দায়িত্ব ও রিপোর্টিং প্রক্রিয়া
  • সাধারণ ভুল ও ঝুঁকি
  • আধুনিক সফটওয়্যারের ব্যবহার
  • সেরা চর্চাগুলো

আয়কর কর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একজন কর্মীর বাৎসরিক আয়ের ভিত্তিতে তিনি কত কর দেবেন তা নির্ধারণ হয়। কর্মীরা আলাদাভাবে কর পরিশোধ করতে পারেন, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাই বেতন থেকে কর কেটে সরকারের কোষাগারে জমা দেন।

এর সুবিধা হলো:

  • কর্মীদের জন্য কর পরিশোধ সহজ হয়
  • সরকার সময়মতো ট্যাক্স পায়
  • নিয়োগকর্তা ও কর্মী উভয়ের স্বচ্ছতা বজায় থাকে

করযোগ্য আয় কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?

কোনো কর্মীর Gross Salary থেকে কিছু Allowance ও Deduction বাদ দিয়ে Taxable Income নির্ধারণ করা হয়।

করযোগ্য আয়ের সাধারণ উপাদান

  • Basic Salary – সম্পূর্ণ করযোগ্য
  • House Rent Allowanceমূল বেতনের ৫০% (ঢাকা/চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত), বাকি অংশ করযোগ্য
  • Medical Allowanceসর্বোচ্চ ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত, অতিরিক্ত অংশ করযোগ্য
  • Conveyance Allowance – সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
  • Festival Bonus – সম্পূর্ণ করযোগ্য
  • Overtime Allowance – সম্পূর্ণ করযোগ্য
  • Other Allowances – প্রতিষ্ঠান ভেদে করযোগ্য ধরা হয়

ছাড়ের সুযোগ (Exemptions/Rebates)


আয়কর স্ল্যাব (২০২৪-২৫ অর্থবছর অনুযায়ী)

ব্যক্তি করদাতাদের জন্য বাংলাদেশে নির্দিষ্ট আয়কর স্ল্যাব আছে। পুরুষ ও নারী/প্রবীণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত সীমা ভিন্ন।

  • পুরুষ ও সাধারণ করদাতা: ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
  • নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতা: ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
  • প্রতিবন্ধী করদাতা: ৪,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত

এরপর আয় অনুযায়ী ধাপে ধাপে করহার:

  1. পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা – ৫%
  2. পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা – ১০%
  3. পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা – ১৫%
  4. পরবর্তী ৬,০০,০০০ টাকা – ২০%
  5. পরবর্তী ৩০,০০,০০০ টাকা – ২৫%
  6. ৫০,০০,০০০ টাকার বেশি আয় – ৩০%

 


নিয়োগকর্তার দায়িত্ব (Employer’s Responsibility)

Income Tax Ordinance অনুযায়ী, একজন নিয়োগকর্তার কর কর্তন প্রক্রিয়ায় কয়েকটি প্রধান দায়িত্ব থাকে।

১. আয় নির্ধারণ করা

কর্মীর বাৎসরিক মোট আয় গণনা করতে হবে। এর মধ্যে বেতন, ভাতা, বোনাস, সুবিধা সব অন্তর্ভুক্ত হবে।

২. করযোগ্য আয় হিসাব করা

প্রযোজ্য করমুক্ত সীমা, ভাতা ও ছাড় বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে।

৩. সঠিক হারে কর কেটে রাখা

প্রতিটি মাসে কর্মীর বেতন থেকে যথাযথ হারে আয়কর কেটে রাখতে হবে।

৪. কর জমা দেওয়া

কর্তিত কর NBR-এর নির্ধারিত কোডে ট্রেজারি চ্যালান বা অনলাইনের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

৫. বার্ষিক রিপোর্ট প্রদান

  • Form 24Q / Salary Statement জমা দেওয়া
  • Withholding Tax Return জমা দেওয়া
  • কর্মীদের Tax Certificate (Form-16) প্রদান করা
  •   

রিপোর্টিং প্রক্রিয়া

রিপোর্টিং হলো কর কর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশে কর কর্তন করলে সেটি NBR-এ রিপোর্ট করতে হয়।

প্রধান ধাপগুলো হলো:

  • TIN যাচাই – কর্মীর Tax Identification Number নিশ্চিত করা
  • Form Fill-up – কর কর্তনের বিবরণসহ প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করা
  • Monthly Return – মাসিক কর জমা দেওয়ার পর সঠিক রিপোর্ট সাবমিট করা
  • Yearly Statement – অর্থবছর শেষে কর্মীর পূর্ণ বেতন ও কর্তনের বিবরণ জমা দেওয়া
  • Tax Certificate প্রদান – কর্মীরা চাইলে তাদের ইনকাম ট্যাক্স ফাইলিংয়ের জন্য নিয়োগকর্তার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে পারেন
  •   

সাধারণ ভুল ও ঝুঁকি

অনেক সময় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু সাধারণ ভুল করে বসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • কর্মীর আয় সঠিকভাবে হিসাব না করা
  • করমুক্ত ভাতা ভুলভাবে গণনা করা
  • TIN নম্বর ছাড়া কর কর্তন করা
  • সময়মতো কর জমা না দেওয়া
  • ভুল রিপোর্ট সাবমিট করা
  • Tax Certificate না দেওয়া

এই ভুলগুলো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বা অতিরিক্ত ট্যাক্সের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।


Payroll Software ও Automation

আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান Payroll Software ব্যবহার করে ট্যাক্স হিসাব ও রিপোর্টিং করে। এর সুবিধাগুলো হলো:

  • স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাক্স হিসাব করা
  • কর স্ল্যাব আপডেট রাখা
  • ভুল কমানো
  • দ্রুত রিপোর্ট জেনারেট করা
  • কর্মীদের জন্য Salary Slip ও Tax Certificate তৈরি করা

বাংলাদেশে জনপ্রিয় Payroll Software: Kormee, Jibika Plexus, Logic, Systech HR


সেরা চর্চা (Best Practices)

  • মাসের শুরুতেই Payroll ও Tax Data reconcile করা
  • প্রতিটি কর্মীর TIN নিশ্চিত করা
  • NBR-এর নির্দেশিকা নিয়মিত আপডেট রাখা
  • কর কর্তন ও জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র সংরক্ষণ করা
  • Audit-এর জন্য আলাদা ফাইল রাখা
  • কর্মীদের নিয়মিত Salary Slip ও Tax Certificate দেওয়া

উপসংহার

কর্মীদের বেতন থেকে আয়কর কর্তন একটি আইনগত দায়িত্ব। এটি শুধু সরকারের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও স্বচ্ছতার বিষয়। সঠিকভাবে আয়কর কর্তন ও রিপোর্টিং করলে কর্মীরা আশ্বস্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে।

যে কোনো HR বা Accounts Professional-এর জন্য এই প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। একে অবহেলা করা মানে অডিট ঝুঁকি, জরিমানা ও আইনি জটিলতার মুখোমুখি হওয়া।


FAQ

প্রশ্ন ১: কর্মীর বেতন থেকে আয়কর কে কেটে রাখে?
উত্তর: সাধারণত নিয়োগকর্তা বেতন থেকে আয়কর কেটে রেখে সরকারে জমা দেন।

প্রশ্ন ২: আয়কর কি প্রতি মাসে কাটা হয় নাকি বছরে একবার?
উত্তর: মাসিক বেতনের সাথে আয়কর কেটে রাখা হয়, তবে সেটি কর্মীর বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত।

প্রশ্ন ৩: House Rent Allowance কি পুরোপুরি করমুক্ত?
উত্তর: না। নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত করমুক্ত, বাকি অংশ করযোগ্য।

প্রশ্ন ৪: Tax Certificate কবে পাওয়া যায়?
উত্তর: অর্থবছর শেষে বা কর্মীর অনুরোধে নিয়োগকর্তা এটি প্রদান করেন।

প্রশ্ন ৫: ভুল কর কর্তন করলে কী হয়?
উত্তর: ভুল হিসাব করলে প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত কর বা জরিমানা দিতে হতে পারে, এবং আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে।

নবীনতর পূর্বতন