নিচে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর পূর্ণ খসড়ার সারসংক্ষেপ দেওয়া হলোঃ
- সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে পরামর্শক পরিষদের সভায়, যার সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূছ।
- অনুমোদনের পর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ভেটিং (পরীক্ষা) এর জন্য , এরপর প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
- শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে সম্মিলিত আলোচনা ও সমাঝোতার ভিত্তিতেই এটি তৈরি হয়েছে।
- আইনের মূল উদ্দেশ্যঃ শ্রম মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা, মালিক-শ্রমিক উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করা, ও সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করা।
- কারখানার আকার অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়নের জন্য্ প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে (২০-৪০০ জন পর্যন্ত)।
- আইনে নতুনভাবে সংযোযিত হয়েছে:
- শ্রমিকের কালো তালিকা তৈরি করা নিষিদ্ধ
- গৃহকর্মীদের শ্রমিক সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্তি
- প্রভিডেন্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক (১০০+ স্থায়ী শ্রমিক থাকলে)
- ইউনভার্সাল পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ
- মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন
- দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন
- বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কর্তৃপক্ষ(ADR) গঠন
অর্থাৎ, আইনের বাস্তবায়ন হবে প্রজ্ঞাপন জারির পর, এবং এটি বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে বড় ধরণের পরিবর্তন আনবে।
নিচে মূল তথ্যগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলোঃ
🔹শ্রম আইন সংশোধনের মূল বিষয়সমূহ
- বর্তমানে বিদ্যমান শ্রম আইনে কোনো প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য মোট শ্রমিকের ২০% এর সম্মতি প্রয়োজন ছিল।
- নতুন সংশোধিত আইনে কারখানার আকার ও শ্রমিকসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই সংখ্যাটি নির্ধারিত হবে।
- “বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫“ শীর্ষক খসড়াটি পরামর্শক কমিটির সভায় সিদ্ধান্তগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে।
- এই আইনের লক্ষ্য হলো শ্রম আইনে আধুনিকায়ন আনা, আন্তর্জাতিক মানে শ্রমনীতি সামঞ্জস্য করা, মালিক ও শ্রমিক উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করা, এবং শ্রমিকদের কল্যাণ ও সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো।
🔹ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা
- ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক বিশিষ্ট কারখানায় – ২০ জনের সম্মতি প্রয়োজন
- ৩০১ থেকে ৫০০ শ্রমিক বিশিষ্ট কারখানায় – ৪০ জনের সম্মতি
- ৫০১ থেকে ১৫০০ শ্রমিক বিশিষ্ট কারখানায় – ১০০ জনের সম্মতি
- ১৫০১ থেকে ৩০০০ শ্রমিক বিশিষ্ট কারখানায় – ৩০০ জনের সম্মতি
- ৩০০১ বা তার বেশি শ্রমিক বিশিষ্ট কারখানায় – ৪০০ জনের সম্মতি
🔹ইউনিয়ন ও সমষ্টিগত দরকষাকষি
- এখন থেকে একটি কারখানায় সর্বোচ্চ ৫টি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে (আগে সর্বোচ্চ ৩টি ছিল)
- যদি কোন কারখানায় একাধিক ইউনিয়ন থাকে, তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে “কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট(CBA)” বা প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়ন নির্বাচন করা হবে।
🔹শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার
- কোন শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত (Blaclist) করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে – অর্থাৎ চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত হওয়ার পর অন্য কোথাও চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
- গৃহকর্মী(Domestic Worker) এখন শ্রম আইনের আওতায় আসবে – যারা নিয়োগকর্তার বাড়িতে পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন কাজ করেন, তারা “শ্রমিক” সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
- ”শ্রমিক” বলতে এমন কাউকে বোঝানো হবে যিনি মজুরি বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাতে – কলমে, কারিগরি, বাণিজ্যিক বা দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত- সরাসরি বা ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন না কেন।
🔹ভবিষ্যত তহবিল ও পেনশন ব্যবস্থা
- ১০০ জন বা তার বেশি স্থায়ী শ্রমিক থাকলে প্রতিতিট প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ফিউচার ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক (আগে এটি ঐচ্ছিক ছিল)।
- বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমে (প্রগ্রেসিভ স্কিম) অংশগ্রহণ করতে পারবে – যেখানে মালিক ও শ্রমিক উভয়ে সমান(৫০%) অবদান রাখবে
- কোন শ্রমিক লিখিতভাবে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি অব্যাহতি পাবেন।
🔹মাতৃত্বকালীন ছুটি
- নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
- এখন থেকে তারা মোট ১২০ দিন ছুটি পাবেন – প্রসবের আগে ৬০ দিন এবং প্রসবের পরে ৬০ দিন (আগে মোট ১১২ দিন ছিল)
🔹দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল ও বিরোধ নিষ্পত্তি
- আইনে নতুন করে “কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল” গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।
- কোন কোন শিল্পখাত এ তহবিলের আওতায় আসবে, তহবিল কীভাবে পরিচালিত হবে – তা সরকার পরবর্তীতে বিধিমালা দ্বারা নির্ধারণ করবে।
- শ্রম আদালতে মামলা জট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কর্তৃপক্ষ(Alternative Dispute Resolution Authority) গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
- এই সংস্থা নিরপেক্ষভাবে শ্রম ও যৌখ বিরোধ মীমাংসা করবে এবং এটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা(ILO)-এর দিক নির্দেশনায় পরিচালিত হবে
| BLA 2025 Draft Download Link |
সোর্সঃ https://www.prothomalo.com/business/industry/s8v9rzevup