আরএমজি ফ্যাক্টরীতে নিরাপদ বহির্গমন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ

 তৈরি পোশাক কারখানায় নিরাপদ বহির্গমন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ

safe-evacuation-and-safety-hazards-in-ready-made-garment-factories


আরএমজি সাস্টেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি বা RSC) হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, গার্মেন্টস নির্মাতা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ।

বাংলাদেশে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় একর্ড(Accord)-এর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ১ জুন ২০২০ তারিখে আরএসসি গঠন করা হয়। আরএসসি কারখানা পরিদর্শন, সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণ, নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য একটি স্বাধীন নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিযোগের প্র্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে।

কোম্পানিটির লক্ষ্য হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে বিশ্বমানের টেকসই নিরাপত্তা বিষয়ক  কার্যক্রম প্রদান করা, যা কিনা এর অভিনব নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সাহায্যে টেকসই ব্যবসা অব্যাহত রাখবে এবং সাপ্লাই চেইন বিকাশের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পকে আরো নিরাপদ ও উত্তম কর্মক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলবে।

এই ব্লগ থেকে আপনি যা জানতে পারবেন:

১. অগ্নিকান্ড অথবা অন্য জরুরী অবস্থায় কারখানা থেকে কিভাবে নিরাপদে বহির্গমন করতে হয়।

২. কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ কিভাবে চিহ্নিত করা এবং নিরসন করা যায়।

৩. আপনার কারখানার সেইফটি কমিটি এবং আরএসসি অফিস আপনার কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার উন্নতির জন্য কিভাবে সাহায্য করতে পারে।



আগুন লাগার ৫ টি সম্ভাব্য উৎসঃ

১. খোলা অগ্নিশিখা ও কাজের সময় ব্যবহৃত দাহ্য তরল পদার্থ;

২. নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক সংযোগ;

৩. ধুলাবালি ও ময়লা জমা;

৪. নিষিদ্ধ স্থানে ধূমপান করা;

৫. আবর্জনা এবং অব্যবহৃত জিনিসপত্র এলোমেলোভাবে এখানে সেখানে পড়ে থাকা।


আগুন লাগলে সয়ংক্রিয়ভাবে ফায়ার এলার্ম বাজতে শুরু করে।

  • যদি আপনি এলার্ম বাজার আগেই আগুন দেখতে পান, তবে আপনার ফায়ার এলার্ম বাজানো উচিৎ।
  • নির্গমন পথগুলো কোথায় তা জেনে রাখা জরুরী। এক্সিট ডোরগুলোর তালা খোলা রাখতে হবে এবং বাঁধামুক্ত রাখতে হবে।
  • আপনার কারখানায় ফায়ার ড্রিল হওয়া প্রয়োজন- যা পূর্ব ঘোষিত নয়।



বৈদ্যুতিক ঝুঁকিসমূহঃ

সবচেয়ে বেশি ঘটিত ৩  টি বৈদ্যুতিক ঝুঁকি  হলো:

১. নিম্ন মানের ও ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ, যেমন পুরাতন তার, মেঝেতে পড়ে থাকা অনাবৃত তার এবং মেশিনের উপর ঝুলে থাকা তার;

২. লাইভ ওর্য়্যাস- অনাবৃত বৈদ্যুতিক তার এবং গ্রাউন্ডেড নয় এমন খোলা তার;

৩. বৈদ্যুতিক আউটলেট এবং বক্সগুলোতে অতিরিক্ত লোড।


কাঠামোগত ঝুঁকিসমূহঃ

নিম্নোক্ত ৩ টি চিহ্ন থেকে বুঝা যাবে আপনার কারখানা ভবনে হয়তো কোন কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে:

১. কলাম, দেয়াল অথবা ফাউন্ডেশনে ফাটল

২. ঝুলে পড়া মেঝে

৩. ক্ষয়প্রাপ্ত দেয়াল


আপনি যদি দেয়াল অথবা মেঝেতে কোন ফাটল দেখতে পান অথবা হেলে পড়া অবস্থায় দেখেন, তাহলে সেইফটি কমিটিকে জানান। একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সঠিকভাবে যাচাই করে ভবনের সংস্কার প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারবেন।

মেশিনের ঝুঁকিসমূহঃ

মেশিন চালনা করার সময় নিম্নোক্ত কারণে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে:

১. মেশিনের ঘূর্ণায়মান অংশে সুরক্ষার জন্য মেশিন গার্ড না থাকা;

২. মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব;

৩. নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক সংযোগ অথবা অনাবৃত তার;

৪. মেশিন অপারেটরদের প্রশিক্ষণের অভাব;

৫. পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) এর স্বল্পতা।


কেমিক্যালের ঝুঁকিসমূহঃ

সঠিকভাবে মজুদ এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হলে কেমিক্যালের কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

আপনি কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করলে, সেগুলোর সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে আপনাকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।


পিছলে যাওয়া এবং পড়ে যাওয়া থেকে ঝুঁকিঃ

নিচের ৩ টি সমস্যার  সমাধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে পিছলে যাওয়া এবং পড়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব:

১. পিচ্ছিল মেঝে;

২. কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা (কাপড়/বৈদ্যুতিক তার/যন্ত্রপাতি/ আবর্জনা);

৩. স্বল্পমাত্রার অথবা ভাঙ্গা লাইট যার কারণে দেখার সমস্যা হয়।

কর্ম সংক্রান্ত ঝুঁকিসমূহঃ

সবচেয়ে বেশি ঘটিত ৪ টি কর্ম সংক্রান্ত ঝুঁকি  হলো:

১. দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অপর্যাপ্ত কর্মবিরতি।

২. অপর্যাপ্ত আলোর ফলে চোখের উপর চাপ, মাথাব্যথা এবং অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে।

৩. অপর্যাপ্ত বায়ুচলাচল ব্যবস্থা অথবা অতিরিক্ত গরম মাথাব্যথা অথবা চামড়ার জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. কর্মভঙ্গি অথবা কাজের পুনরাবৃত্তি যা অনাকাক্সিক্ষত শারিরীক চাপ সৃষ্টি করে।


সেইফটি কমিটিকে কাজে লাগানো ঃ

আপনাদের সেইফটি কমিটির মূল কাজ হলো কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকিসমূহ দূর করা।

সেইফটি কমিটিকে ৩টি ধাপে কাজে লাগানো যায়।

১. সেইফটি কমিটির কাউকে সমস্যার বিষয়ে জানান।

২. সেইফটি কমিটিকে সমস্যাটি তদন্ত করতে দিন। বিষয়টি কেন সমস্যা সৃষ্টি করছে তা বুঝতে তাদের সাহায্য করুন।

৩. কমিটি যখন সমস্যাটি বুঝতে পারবে, ঝুঁকিটি কমানোর ক্ষেত্রে সমাধান বের করতে তাদের সহায়তা করুন।

আরএসসিকে কাজে লাগানোঃ

কখনও কখনও  সেইফটি কমিটির মাধ্যমে নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে, আপনার আরএসসি অফিসে যোগাযোগ করা উচিৎ।

নিরাপত্তা বিষয়ক অভিযোগ করতে যোগাযোগ করুন: +৮৮০ ১৭৬ ৯৯৬ ৯০০০

আরএসসি প্রাপ্ত সকল নিরাপত্তা বিষয়ক অভিযোগের তদন্ত করবে, সেইফটি কমিটি এবং কারখানার ম্যানেজারদের সাথে কাজ করে সমস্যার সমাধান বের করবে।

তথ্যসূত্রঃ আরএসসি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।


RSC-RMG-SUSTAINABILITY-COUNCIL




নবীনতর পূর্বতন